এবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের মসনদে আবারও দখলের পর কট্টর ইসলামপন্থি তালেবান সরকার নারী সমাজকে দমনের জন্য একের পর এক কঠিন নিয়ম ও আইন করছে। তারই ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তানে নারীদের প্রকাশ্যে পাথর ছুড়ে হত্যার নিয়ম আবারও চালু করার ঘোষণা দিয়েছে তালেবান।
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শনিবার তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এই ঘোষণা দেন। এক অডিও বার্তায় তিনি বলেন, আমরা নারীদের বেত্রাঘাত করব। আমরা তাদের (ব্যভিচারের জন্য) প্রকাশ্যে পাথর মেরে হত্যা করব।
আফগানিস্তানের সরকার নিয়ন্ত্রিত বেতার-টেলিভিশন প্রচারিত ওই ওই অডিওতে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, আপনারা হয়ত এটিকে নারী অধিকারের লঙ্ঘন বলতে পারেন। কিন্তু তারা আমাদের গণতান্ত্রিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কর্মকাণ্ড করেছে।
এদিকে আখুন্দজাদা ঘোষণা দেন, তারা আফগানিস্তানে শরিয়াহ আইন কার্যকর করা শুরু করবেন। এর আওতায় ‘ব্যভিচারের’ জন্য নারীদের প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত এবং পাথর ছুড়ে মারা হবে। তিনি বলেন, রাজধানী কাবুল দখলের মধ্য দিয়ে তালেবানের কাজ শেষ হয়নি, এটি মাত্র শুরু।
এ খবরটি আতঙ্কের হলেও আফগানিস্তানের নারী অধিকার সংগঠনগুলো এতে অবাক হয়নি। তারা মনে করে, আফগান নারীদের ১৯৯০-এর দশকে তালেবান শাসনের অন্ধকারতম দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশের দেড় কোটি নারী ও মেয়ের অধিকারের অবশিষ্ট যতটুকু ছিল, তাও এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
এদিকে দেশটির মানবাধিকার সংগঠন ওমেনস উইনডো অব হোপ-এর প্রধান আইনজীবী সাফিয়া আরেফি বলেন, তালেবান নেতার এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে নারীদের শাস্তির একটি নতুন অধ্যায় শুরু হলো এবং আফগান নারীরা গভীর একাকিত্বে পতিত হবেন। তাঁদের বাঁচানোর জন্য এখন পাশে কেউ নেই।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আফগান গবেষক সাহার ফেতরাত বলেন, দুই বছর আগেও তাদের এটা বলার সাহস ছিল না, কিন্তু এখন নারীদের পাথর নিক্ষেপের কথা বলছে। তালেবান তাদের কঠোর নীতিগুলো একের পর এক পরীক্ষা করে এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। কারণ, তাদের জবাবদিহি করার মতো কেউ নেই।
এদিকে গত ২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতা দখলের পর তালেবান পশ্চিমা সমর্থিত আফগান সংবিধানের সঙ্গে বিদ্যমান ফৌজদারি এবং দণ্ডবিধি স্থগিত করে। সেখানে শরিয়াহ আইনের কঠোর ব্যাখ্যা প্রতিস্থাপন করেছে। নারী আইনজীবী, বিচারক যাঁরা আগের সরকারের সময়ে কাজ করছেন তাঁদেরও নিষিদ্ধ করে তালেবান।